ডাল মিশন: কৃষক ক্ষমতায়নের না বলা গল্প
ডাল মিশন (Self-Reliance in Pulses Mission) কৃষকদের ক্ষমতায়ন ও ভারতের ডাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। জানুন এর সুবিধা, আবেদন পদ্ধতি ও লক্ষ্য।
Table of Contents
- ভূমিকা: কৃষকের মুখে হাসি ফেরাতে এক নতুন উদ্যোগ
- ডাল মিশন আসলে কী? এর মূল লক্ষ্য কী?
- কৃষকদের জন্য কী কী সুবিধা রয়েছে এই মিশনে?
- আত্মনির্ভরতার পথে ভারতের ডাল উৎপাদন: একটি বাস্তবসম্মত চিত্র
- ডাল মিশনে কীভাবে অংশ নেবেন? সহজ ধাপগুলি জেনে নিন
- গ্রামাঞ্চলে ডাল মিশনের বাস্তব প্রভাব: এক পরিবর্তিত ছবি
- প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
- উপসংহার: এক নতুন ভোরের প্রত্যাশা
ভূমিকা: কৃষকের মুখে হাসি ফেরাতে এক নতুন উদ্যোগ
ভারতবর্ষে ডাল শুধু একটি খাদ্যশস্য নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের থালায় ডাল যেন এক প্রকার নিশ্চিত পুষ্টির উৎস। তবে জানেন কি, এই প্রয়োজনীয় ডালের জন্য আমাদের এখনও অনেকাংশে বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়? চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন সেভাবে বাড়ছিল না, যার ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন আমাদের দেশের অগণিত কৃষক ভাইবোনেরা। ডালের সঠিক মূল্য না পাওয়া, ভালো বীজের অভাব, আর ফলন ভালো না হলে ক্ষতির ভয়—এইসব তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে বাধা দিচ্ছিল।
এই সমস্যা সমাধানের জন্যই ভারত সরকার নিয়ে এসেছে এক যুগান্তকারী পরিকল্পনা— স্বনির্ভর ডাল মিশন (Mission for Aatmanirbharta in Pulses)। এটি শুধু একটি সরকারি প্রকল্প নয়, এটি আমাদের দেশের কৃষকদের জন্য একটি স্বপ্নের মতো। এই মিশনের মাধ্যমে সরকার চাইছে ডাল উৎপাদনে ভারতকে স্বাবলম্বী করে তুলতে, আর একই সাথে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে। আমরা আজ আলোচনা করব এই মিশনের এমন কিছু দিক, যা হয়তো আপনার কাছে এতদিন অজানা ছিল, বা আপনি সেভাবে জানতে পারেননি।
এই মিশন শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি কৃষক ক্ষমতায়নের এক না বলা গল্প। এটি এমন একটি পরিকল্পনা, যা দেশের প্রতিটি ডাল উৎপাদনকারী কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে চায়, তাঁদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে চায়। এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার এক বিরাট পদক্ষেপ, যাতে তাঁরা দেশের খাদ্য সুরক্ষায় আরও বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। আপনি যদি একজন কৃষক হন, অথবা কৃষকদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন, তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
ডাল মিশন আসলে কী? এর মূল লক্ষ্য কী?
সরল ভাষায় বলতে গেলে, ডাল মিশন হলো ভারতের ডাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের একটি ছয় বছরের রোডম্যাপ। কল্পনা করুন, আপনার পরিবার যদি কোনো একটি জিনিসের জন্য সব সময় অন্যের উপর নির্ভর করে, তাহলে কেমন লাগবে? ঠিক তেমনই, ভারত সরকার চায় না যে আমাদের মতো একটি কৃষিপ্রধান দেশ এত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্যশস্যের জন্য অন্য দেশের দিকে তাকিয়ে থাকুক। এই লক্ষ্য নিয়েই ২০২২-২৩ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে এই মিশনের কথা প্রথম ঘোষণা করা হয়। এরপর, ২০২৫ সালের ১০ই অক্টোবর কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী এই মিশনের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন এবং ১১ই অক্টোবর, ২০২৫-এ এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য হলো, ডাল উৎপাদনে আমাদের যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করা। বর্তমানে আমাদের দেশের চাহিদা মেটাতে প্রায়ই ডাল আমদানি করতে হয়, যা অর্থনৈতিকভাবে আমাদের জন্য ভালো নয়। এই মিশন বিশেষভাবে মসুর (Masoor), অড়হর (Tur), এবং মাসকলাই (Urad) ডাল উৎপাদনে জোর দিচ্ছে, কারণ এই তিনটি ডালের চাহিদা দেশে সবচেয়ে বেশি।
মিশনের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে:
- জমির পরিমাণ বৃদ্ধি: ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে ডাল চাষের জন্য ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ২৭.৫ মিলিয়ন হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ৩১ মিলিয়ন হেক্টর করা হবে। ভাবুন, কত বড় একটি পরিবর্তন!
- উৎপাদন বৃদ্ধি: ২০২৪-২৫ সালের ২৪.২ মিলিয়ন টন থেকে উৎপাদন বাড়িয়ে ২০৩০-৩১ সালের মধ্যে ৩৫ মিলিয়ন টন করা হবে। এটি দেশের খাদ্য সুরক্ষার জন্য একটি বিশাল পদক্ষেপ।
এই লক্ষ্য অর্জন করতে, সরকার একটি বহু-মাত্রিক কৌশল গ্রহণ করেছে, যেখানে উন্নত বীজ থেকে শুরু করে কৃষকদের প্রশিক্ষণের সমস্ত দিকই অন্তর্ভুক্ত। এই মিশনের একটি বিস্তারিত নির্দেশিকা পেতে, আপনি আমাদের আত্মনির্ভর ডাল মিশন ২০২৫: গাইড, আবেদন, সুবিধা শীর্ষক পোস্টটি পড়ে দেখতে পারেন। সেখানে আপনি এই মিশনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
কৃষকদের জন্য কী কী সুবিধা রয়েছে এই মিশনে?
ডাল মিশন শুধু দেশের জন্য নয়, সরাসরি কৃষকদের জন্যই তৈরি হয়েছে। এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে, যা কৃষকদের জীবনযাত্রায় সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক কী কী সুবিধা থাকছে:
১. উন্নত বীজ বিতরণ ও গবেষণা
আমরা জানি, ভালো ফলনের জন্য উন্নত মানের বীজ অপরিহার্য। এই মিশন কৃষকদের জন্য ১.২৬ কোটি কুইন্টাল সার্টিফায়েড বীজ বিতরণের ব্যবস্থা করবে। এছাড়া, ৮৮ লাখ বিনামূল্যে বীজের কিট দেওয়া হবে। এর মানে হলো, কৃষকদের আর ভালো বীজের জন্য চিন্তা করতে হবে না। শুধু তাই নয়, সরকার উচ্চ ফলনশীল, পোকা-মাকড় প্রতিরোধী এবং জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল নতুন ডালের জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে। এর ফলে, কৃষকরা এমন বীজ পাবেন যা কম পরিশ্রমেও বেশি ফলন দেবে এবং প্রতিকূল আবহাওয়াতেও টিকে থাকতে পারবে। এটা যেন একজন কৃষককে আধুনিক চাষাবাদের সবথেকে বড় হাতিয়ারটি হাতে তুলে দেওয়ার মতো।
২. প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপন
ডাল চাষের পর তার সঠিক প্রক্রিয়াকরণ খুব জরুরি। অনেক সময় দেখা যায়, ফলন ভালো হলেও সঠিক প্রক্রিয়াকরণের অভাবে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েন। এই সমস্যা সমাধানে, সরকার প্রধান ডাল উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলিতে ১,০০০টি নতুন প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। প্রতিটি ইউনিটের জন্য সরকার ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে। এর সুবিধা কী? এর ফলে কৃষকদের পণ্য সরাসরি এই ইউনিটগুলিতে বিক্রি করার সুযোগ থাকবে, মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট কমবে, এবং তাঁদের উৎপাদিত ডালের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এটি কৃষকদের জন্য একটি বাড়তি আয়ের উৎস তৈরি করবে এবং একই সাথে উৎপাদিত পণ্যের অপচয় কমাবে।
৩. ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) নিশ্চিতকরণ
এটি হয়তো কৃষকদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা। প্রায়শই দেখা যায়, ভালো ফলন হলে বাজার দর কমে যায় এবং কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পান না। এই মিশনে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি নিবন্ধিত কৃষকদের উৎপাদিত ১০০ শতাংশ ডাল ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) তে কিনবে। এর অর্থ হলো, কৃষকরা তাঁদের ডাল বিক্রি করার জন্য একটি নিশ্চিত মূল্য পাবেন, বাজারের ওঠানামার ভয় তাঁদের থাকবে না। এটি তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা দেবে এবং ডাল চাষে তাঁদের আগ্রহ আরও বাড়াবে। একজন কৃষক যখন জানেন যে তাঁর ফসলের একটি নির্দিষ্ট দাম বাঁধা আছে, তখন তিনি নিশ্চিন্তে চাষাবাদ করতে পারেন।
আত্মনির্ভরতার পথে ভারতের ডাল উৎপাদন: একটি বাস্তবসম্মত চিত্র
ভারত ডালের সবচেয়ে বড় উৎপাদক এবং একই সাথে সবচেয়ে বড় ভোক্তা। এই দুটো পাশাপাশি দেখলে মনে হয়, আমাদের তো স্বনির্ভর হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে ডালের চাহিদা এতটাই বেশি যে দেশীয় উৎপাদন তা মেটাতে পারে না। এই কারণেই প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ডাল আমদানি করতে হয়। এই আমদানি নির্ভরতা কেবল আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করে না, বরং আন্তর্জাতিক বাজারে ডালের দামের ওঠানামার কারণে আমাদের খাদ্য সুরক্ষাও কিছুটা হুমকির মুখে পড়ে।
ডাল মিশন এই ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে এসেছে। এর লক্ষ্য শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি নয়, বরং এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করা যেখানে কৃষকরা ডাল চাষে উৎসাহিত হবেন, প্রযুক্তিগত সহায়তা পাবেন, এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র আত্মনির্ভর হব না, বরং ডাল চাষকে আরও লাভজনক পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন মধ্যপ্রদেশের এক কৃষক রamesh, যিনি এতদিন ভালো ফলন সত্ত্বেও বাজারের অনিশ্চয়তার কারণে ডাল চাষে আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু এই মিশনের আওতায় তিনি উন্নত বীজ পেলেন, কম খরচে সার পেলেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর ডালের জন্য একটি নিশ্চিত MSP পেলেন। এখন তিনি জানেন যে তাঁর পরিশ্রমের মূল্য সরকার নিশ্চিত করবে। এই বিশ্বাসই তাঁকে ডাল চাষে আরও উৎসাহী করে তুলবে। এভাবেই দেশের হাজার হাজার রমেশের মাধ্যমে ভারত ডাল উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে। কে কারা এই ভর্তুকির জন্য আবেদন করতে পারবে, তা জানতে আমাদের ডাল মিশন যোগ্যতা: ভর্তুকির জন্য কারা আবেদন করতে পারবে? এই বিস্তারিত পোস্টটি দেখতে পারেন।
ডাল মিশনে কীভাবে অংশ নেবেন? সহজ ধাপগুলি জেনে নিন
যদি আপনি একজন কৃষক হন এবং এই ডাল মিশনের অংশীদার হতে চান, তবে প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। সরকার এই প্রক্রিয়াটিকে যতটা সম্ভব সরল করার চেষ্টা করেছে যাতে দেশের প্রান্তিক কৃষকরাও সহজে এর সুবিধা নিতে পারেন।
প্রথমত, আপনাকে এই মিশনে নিজেকে নিবন্ধিত করতে হবে। সাধারণত, এই ধরনের সরকারি প্রকল্পগুলির জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া থাকে। আপনাকে সরকারের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হবে এবং আপনার কৃষি জমির বিবরণ, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ ইত্যাদি জমা দিতে হবে। মনে রাখবেন, সঠিক তথ্য দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে আপনার আবেদন বাতিল না হয়।
নিবন্ধনের পর, আপনি মিশনের আওতায় থাকা বিভিন্ন সুবিধা যেমন - উন্নত বীজ, বিনামূল্যে বীজের কিট, প্রশিক্ষণের সুযোগ এবং MSP-তে ফসল বিক্রির সুযোগ পাবেন। আপনার এলাকার কৃষি বিভাগ বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস থেকেও আপনি এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও সহায়তা পেতে পারেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, অনেক সাহায্যকারী দল আছে যারা আপনাকে এই আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে। এই ডাল মিশনে কীভাবে আবেদন করতে হয়, তার একটি সম্পূর্ণ স্টেপ-বাই-স্টেপ গাইড জানতে, আমাদের ডাল মিশন ২০২৫ এর জন্য আবেদন করুন: স্টেপ-বাই-স্টেপ অনলাইন গাইড এই পোস্টটি পড়ুন। এটি আপনাকে পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে সাহায্য করবে।
গ্রামাঞ্চলে ডাল মিশনের বাস্তব প্রভাব: এক পরিবর্তিত ছবি
ডাল মিশনের লক্ষ্য শুধু কাগজে-কলমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা নয়, এর গভীর এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে। যখন একজন কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্যের নিশ্চিত মূল্য পান, তখন তাঁর আর্থিক অবস্থা উন্নত হয়। এই আর্থিক সচ্ছলতা তাঁদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সাহায্য করে – যেমন, ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুলে পড়ানো, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি করা, এবং নতুন কৃষি প্রযুক্তি বিনিয়োগ করা।
শুধু ব্যক্তিগত কৃষক নয়, এই মিশন গোটা গ্রামীণ সম্প্রদায়ের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনের ফলে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কৃষকরা তাঁদের ডাল সরাসরি এই ইউনিটগুলিতে বিক্রি করতে পারবেন, যার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের উপর নির্ভরতা কমবে। এর ফলে বাজার ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ হবে এবং কৃষকরা তাঁদের পরিশ্রমের সম্পূর্ণ ফল উপভোগ করতে পারবেন। গ্রামে কৃষির ওপর নির্ভরতা যেমন বাড়বে, তেমনই কৃষিভিত্তিক শিল্পও বিকশিত হবে।
এছাড়া, উন্নত বীজ এবং আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশের উপর চাপ কমবে। জলবায়ু সহনশীল জাতগুলি কৃষকদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করবে, যা তাঁদের আর্থিক ঝুঁকি কমিয়ে দেবে। এই প্রতিটি ছোট ছোট পরিবর্তন একত্রিত হয়ে গ্রামীণ ভারতের এক নতুন এবং শক্তিশালী চিত্র তৈরি করবে, যেখানে কৃষকরা শুধুমাত্র উৎপাদক নন, তাঁরা দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হিসেবে আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এটি সত্যিই কৃষকদের ক্ষমতায়নের এক না বলা গল্প, যা সময়ের সাথে সাথে দেশের প্রতিটি প্রান্তে অনুরণিত হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
Q: ডাল মিশন কবে শুরু হয়েছে এবং এর মেয়াদ কত বছর?
A: ডাল মিশনের বিস্তারিত ঘোষণা করা হয় ২০২৫ সালের ১০ই অক্টোবর এবং এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১১ই অক্টোবর, ২০২৫। এটি একটি ছয় বছরের মিশন, যা ২০৩০-৩১ সাল পর্যন্ত চলবে।
Q: কোন নির্দিষ্ট ডালগুলিতে এই মিশন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?
A: এই মিশন প্রধানত মসুর (Masoor), অড়হর (Tur) এবং মাসকলাই (Urad) ডাল উৎপাদনে বেশি জোর দিচ্ছে, কারণ এই তিনটি ডালের চাহিদা দেশে সবচেয়ে বেশি এবং উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে।
Q: কৃষকদের জন্য কি বিনামূল্যে বীজের কিট দেওয়া হবে?
A: হ্যাঁ, মিশনের আওতায় ৮৮ লাখ বিনামূল্যে বীজের কিট বিতরণ করা হবে, যাতে কৃষকরা উন্নত মানের বীজ ব্যবহার করে ভালো ফলন ফলাতে পারেন। এছাড়া ১.২৬ কোটি কুইন্টাল সার্টিফায়েড বীজও বিতরণ করা হবে।
Q: প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনে সরকার কী ধরনের সহায়তা দেবে?
A: সরকার প্রধান ডাল উৎপাদনকারী অঞ্চলে ১,০০০টি নতুন প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। প্রতিটি ইউনিটের জন্য সরকার ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে, যা স্থানীয় কৃষকদের পণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণে সাহায্য করবে।
Q: কৃষকদের উৎপাদিত ডালের জন্য কি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) নিশ্চিত করা হয়েছে?
A: হ্যাঁ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি নিবন্ধিত কৃষকদের উৎপাদিত ১০০ শতাংশ ডাল ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) তে কিনবে। এর ফলে কৃষকরা তাঁদের ফসলের নিশ্চিত ও ন্যায্য মূল্য পাবেন।
Q: এই মিশনে অংশ নিতে হলে কৃষকদের কী কী নথি প্রয়োজন হবে?
A: সাধারণত, আধার কার্ড, জমির দলিল বা খতিয়ান, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ এবং কৃষকের পরিচয় প্রমাণকারী অন্যান্য নথি প্রয়োজন হতে পারে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি আমাদের আত্মনির্ভর ডাল: কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় নথি এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
উপসংহার: এক নতুন ভোরের প্রত্যাশা
ডাল মিশন সত্যিই ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন ভোরের সূচনা করছে। এটি কেবল ডাল উৎপাদনে আমাদের দেশকে স্বনির্ভর করবে না, বরং দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষকের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। যে কৃষকরা এতদিন অনিশ্চয়তার মধ্যে চাষাবাদ করতেন, তাঁদের জন্য এটি একটি নিশ্চিত আয়ের পথ খুলে দেবে। উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি, প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ এবং সর্বোপরি MSP-তে ফসল বিক্রির নিশ্চয়তা—এই সব কিছুই কৃষকদের ক্ষমতায়নের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
আপনি যদি একজন কৃষক হন, তবে এটি আপনার জন্য একটি সোনালী সুযোগ। সরকারের এই উদ্যোগের সুযোগ নিন, নিবন্ধিত হন এবং আপনার চাষাবাদে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করুন। এই মিশন শুধু আমাদের থালায় ডালের অভাব পূরণ করবে না, বরং আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে কাজ করবে। আমাদের প্রত্যেকেরই এই মহৎ উদ্যোগের অংশীদার হওয়া উচিত, কারণ কৃষকদের সমৃদ্ধি মানেই দেশের সমৃদ্ধি। চলুন, আমরা সবাই মিলে এই ডাল মিশনের সাফল্য কামনা করি এবং এর মাধ্যমে এক শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর ভারতের নির্মাণে অংশ নেই।